ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে এবারও বিফল বিএনপি

মুখে মুখে ভারত বিরোধিতা করলেও দেশটির সঙ্গে তলে তলে ঠিকই সুসম্পর্ক রাখতে মরিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। অতীতে বহুবার এর প্রমাণও মিলেছে। ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার ‘অযথা’ আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিল দলটি। তবে সে আনন্দ শেষ পর্যন্ত মিলিয়ে গেছে।

এবার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক করতে গিয়ে আরও একটি ধাক্কা খেলো বিএনপি। ঢাকায় সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল হওয়ায় খোদ দলীয় নেতারাই এমনটি মনে করছেন।

সূত্রমতে, বিএনপির পররাষ্ট্র উইংয়ে ভারত চ্যাপ্টারের দায়িত্বে থাকা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বৈঠক করার সুযোগ পেয়েছিলেন শ্রিংলার সঙ্গে। বিএনপির পক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টার পর সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বিএনপির তিন নেতার সঙ্গে মঙ্গলবার (৩ মার্চ) সকাল ১০টায় প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পূর্বনির্ধারিত বৈঠকের তিন ঘণ্টা আগে ওইদিন সকাল ৭টায় বিএনপিকে জানিয়ে দেওয়া হয়, অনিবার্য কারণে বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। তবে বৈঠক কেন বাতিল করা হলো— সে ব্যাপারে ভারতের হাইকমিশন কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি বিএনপিকে।

যদিও একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি বিভিন্ন সময়েই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ করে থাকে। এবারও তারা ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনার এজেন্ডায় এসব বিষয় রাখতে চেয়েছিল। তবে দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নয়। এতে শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি বাতিল হয়।

এদিকে এ ব্যাপারে বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভারতের আলোচনা পছন্দ হয়নি। তা-ই হয়তো তারা করেনি। আমি এ ব্যাপারে কিছু বলবো না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জিজ্ঞাসা করুন।’

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। জোটসঙ্গী জামায়াতের হরতালের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করায় বিএনপির-ভারত সম্পর্কে ফাটল ধরে।

গত সাত বছর ধরে বিএনপি আপ্রাণ চেষ্টা করেছে এই ফাটল সারাতে। বিভিন্ন সময় দলের পক্ষ থেকে দিল্লিতে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। প্রণব মুখার্জির বৈঠক বাতিল করার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজে গিয়ে হোটেল সোনারগাঁওয়ে দেখা করে এসেছেন। তবে এবারের ঘটনার পর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈঠক বাতিলের মধ্য দিয়ে মূলত বিএনপি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আরও একটি বড় ধাক্কা খেলো। বিএনপির ব্যাপারে দিল্লির বৈরী মনোভাব স্থায়ী রূপ নিলো।